নিজস্ব প্রতিবেদক : করদাতাদের অভূতপূর্ব সাড়ার মধ্য দিয়ে শেষ হল সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা। এবারের মেলায় সবমিলিয়ে ২ হাজার ২১৭ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। রিটার্ন জমা দিয়েছেন সাড়ে ৩ লাখের মতো করদাতা। আর সেবা নিয়েছেন ১১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। গতবারের মেলায় ২ হাজার ১১২ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার কর আদায় হয়েছিল। রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জন। সেবা নিয়েছিলেন ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন। এ হিসাবে এবার মেলায় কর বেড়েছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। রিটার্ন জমা বেড়েছে ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ। আর সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ। শেষ দিন গত মঙ্গলবার মেলা সকাল ৮টায় শুরু হয়ে রাত ১০টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করদাতা-সেবাগ্রহীতাদের ভিড়ের কারণে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। মধ্য রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, শেষ দিনে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। রিটার্ন দাখিল হয় ৬৬ হাজার ৩৩৩ জনের, সেবা নেন ২ লাখ ২৫ ৪৫৯ জন। মেলার শেষ দিনও ছিল করদাতা-সেবাগ্রহীতাদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে কর দেওয়ার পর ট্যাক্স কার্ড নিতে ছিল সবার ব্যাপক আগ্রহ, যা এবারই প্রথম চালু হয়। আয়কর মেলার শেষদিন ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৮টি স্পটে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৫৬টি জেলা শহরে, ৩৪টি উপজেলা, ৭১টি উপজেলায় (ভ্রাম্যমাণ) আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও নিমার্ণাধীন জাতীয় রাজস্ব ভবনে ঢাকার মেলা উদ্বোধন করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। মেলা শেষে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেলার পরিধি ও সেবা গতবছরের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়। মেলার শেষদিন করদাতা থাকা পর্যন্ত মেলায় সেবা দেওয়া হয়। আয়কর মেলা শেষ হলেও আগামি ৯ নভেম্বর থেকে মেলায় বিদ্যমান সব করসেবা, ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড কর অঞ্চলে দেওয়া হবে বলে এনবিআর জানিয়েছে। ১২ থেকে ২৩ নভেম্বর সব কর অঞ্চলে আয়কর মেলার মতোই রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। মেলার পর ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর সারাদেশে সব কর অঞ্চলে আয়কর সপ্তাহ পালিত হবে। সেখানে মেলার পরিবেশে মেলার মতোই সব কর সেবা দেওয়া হবে। সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে আয়কর মেলা ২০১৭ এর সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধান অতিথি ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
৮৪ পরিবার পেলো ‘কর বাহাদুর’ সম্মননা
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে বাছাই করা ৮৪টি পরিবার ‘কর বাহাদুর’ হিসেবে সম্মানিত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ কর পরিশোধের জন্য প্রথম বারের মতো এই সম্মাননা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর মেলা শেষে গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের নির্মাণাধীন ভবনে এক অনুষ্ঠানে ‘কর বাহাদুর’দের সম্মাননাপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। একই অনুষ্ঠানে সেরা করদাতাদেরও পুরস্কৃত করা হয়। দীর্ঘ মেয়াদী কর দেওয়ার জন্য ৫১৭ জনকে ট্যাক্স কার্ডও দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। রাজস্ব আদায় পরিকল্পনার এক-তৃতীয়াংশ আয়কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করে এবারের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী মুহিত করদাতাদের উৎসাহিত করতে ‘কর বাহাদুর পরিবার’ এর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে কোনো পরিবারের সব সদস্য কর দিলে সে পরিবার ‘কর বাহাদুর পরিবার’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। আয়কর মেলায় সিনিয়র সিটিজেন ক্যাটাগরিতে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক এবং তরুণ ক্যাটাগরিতে গাজী গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মুর্তুজা পাপ্পাকে সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী হিসেবে সম্মাননা ও টেক্স কার্ড প্রদান করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ কর পরিশোধকারী হিসেবে ঢাকা থেকে ১৬ পরিবারকে ‘কর বাহাদুর’র সম্মাননা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম থেকে এই সম্মাননা পেয়েছে আটটি পরিবার। ৬৪টি জেলার মধ্যে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে ‘কর বাহাদুর’ সম্মাননা পায়নি কেউ। তবে পার্বত্য অন্য জেলা বান্দরবান থেকে পেয়েছে মাহবুবুর রহমানের পরিবার। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ‘কর বাহাদুর’ হয়েছেন। এদের মধ্যে মাদারীপুর জেলা থেকে সম্মাননা পেয়েছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও তার পরিবার, চট্টগ্রাম থেকে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি ও তার পরিবার, জামালপুর জেলা থেকে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার পরিবার। সাবেক ধর্মমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া ও তার পরিবার পটুয়াখালী জেলা থেকে পেয়েছে ‘কর বাহাদুর’র সম্মাননা। সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা থেকে এ কে এম রহমতুল্লাহ ও তার পরিবার, রাজবাড়ি থেকে জিল্লুল হাকিম ও তার পরিবার, বাগেরহাট থেকে মীর শওকত আলী বাদশা ও তার পরিবার এই সম্মান পেয়েছে। কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খাঁনও ‘কর বাহাদুর’ হয়েছেন। শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিবার নিয়ে ‘কর বাহাদুর’ হয়েছেন আবদুল মাতলুব আহমাদ, আহমেদ আকবর সোবহান, লতিফুর রহমান, মিজানুর রহমান সিনহা, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম মুর্শেদী, আবদুল হক। নরসিংদীর ব্যবসায়ী আবদুল কাদির মোল্লা ও তার পরিবারও কর বাহাদুর সম্মাননা পেয়েছেন।